গাড়ির ড্রাইভারকে বললাম
সামনের ব্রিজের উপর গাড়ি দাড় করতে ।
সে বলল আপনি না বললেও আমি দাড় করতাম, যারাই এখানে ঘুরতে আসে, তারাই এ জায়গায় দাঁড়ায় সেলফি তোলে, ছবি তোলে ।
এই বলে সে গাড়িটা নিয়ে দাড় করালো ব্রিজের ঠিক মাঝে সাইড করে ।
নেমে পড়লাম সেই বিখ্যাত Coronation Bridge এর উপর 1941 সালে উদ্বোধন হওয়া এই সেতু সেই সময় 4 লাখ টাকা দিয়ে তৈরি করা হয় । পায়ের নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা তিস্তা নদী । এই সেতুটির আরেক নাম সেবক ব্রিজ ।
নদীর দুই ধারে সেবক বাজার, দূরে ছোট ছোট পাহাড়ি ধাঁচের বাড়ি, বা পাহাড়ি বস্তি দেখা যাচ্ছে । চারিদিকের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে উঠে পড়লাম গাড়িতে ।
ড্রাইভার দাদাকে বললাম খিদে পেয়েছে একটা ভালো হোটেল দেখে গাড়ি দাড় করতে ।
গ্যাংটক যাওয়ার পথ সবে শুরু সেই সকালে নেমেছি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে , নেমে গাড়ি ঠিক করেই গ্যাংটোকের উদ্দেশে পা বাড়িয়েছি ।
Njp ( New Jalpaiguri) to Gangtok full car fare (4 Seat) - Rs. 2600-3000
in share car Rs.400-500
***(rates are increasing on peak seasons)
Gangtok Bus Timing from Siliguri SNT Bus stand -
6:30am, 7:15am, 8:30am, 9:30am, 10:30am (AC), 11:00am, 12:30pm, 1:00pm, 1:30pm, 2:00pm, 3:00pm.
http://www.sntd.in/PDF/BusSchedule.pdf
স্টেশন থেকে সেবক পৌছেতে প্রায় 2 ঘন্টা লেগে গেছে আমাদের । তাই খিদেটাও বেশ চাগিয়ে উঠেছে ।
হা ঠিকই ধরেছেন সময়টা একটু বেশিই লেগেছে আমাদের কারণটা আর কিছু না একবার চাকা পাম্পচার আর তেল ভরতে বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে । তবে পাহাড়ের প্রথম দৃশ্য চোখে পড়তে তা সব ভুলিয়ে দিয়েছে ।
সমতলের মানুষের অনেক দিন পর পাহাড়ের প্রথম দর্শনের অনুভূতি যে কি হতে পারে তা বোঝানোর ভাষা আমার নেই । আর যাদের জীবনের প্রথম দর্শন ,মানে যারা প্রথম পাহাড় দেখছে তাদের কাছে এ এক স্বপ্ন রাজ্য ,নতুন দেশ, নতুন বেশ, নতুন ভাষা, যা তার প্রতিদিনের ক্লান্ত জীবনের স্মৃতি গুলোকে ম্যাজিকের মতো এক নিমেষে ভ্যানিশ করে দিতে পারে ।
গাড়ি এসে দাড়ালো একটা হোটেলের সামনে ড্রাইভারদা বললো এটা ভালো হোটেল এখানে খেয়ে নিন । নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে ।
এই সমস্ত হোটেল গুলির সাথে গাড়ি ড্রাইভারদের চুক্তি থাকে টুরিস্ট কাস্টমার এনে দিতে পারলে সে একটা টাকার ভাগ বা কমিশন পায় সেই সঙ্গে তার খাওয়া টা ফ্রী হয় ।
তবে এটা ও উপলব্ধি করলাম এই পরিবেশে এই ব্যাবসার উপরে নির্ভর করে এদের জীবিকা চলে, তাই নাই বা হলো একটু কম গুণমানের খাবার দেখাই যাক না । হাসি মুখেই ঢুকলাম হোটেলে ,বেশ গোছানো হোটেল । খাবার অর্ডার দিয়ে দিলাম, খাবার তৈরি হতে 15 - 20 মিনিট সময় লাগবে। হোটেলটা সেবক ব্রিজ থেকে 2 km এর মধ্যেই , সামনে লম্বা গাড়ি যাত্রা তাই তার আগে খাওয়া দাওয়া সেরে নেওয়াটা ভালো ।
New jalpaiguri ------- Gangtok - 114 km
গাড়িতে সময় লাগে 4 - 5 ঘন্টা
আমরা সবে 1 ঘন্টার রাস্তা এসেছি তাই এখনো বাকি 3-4 ঘন্টার রাস্তা ।
ইতি মধ্যে গরম গরম খাবার হাজির ।
মোমো, হাক্কা নুড্ডুল সঙ্গে কফি
জমিয়ে খাওয়া হলো । খাবারের মান সত্যিই খুব ভালো দামও ঠিকঠাক।
খাওয়া সেরে গাড়িতে উঠে বসলাম ঘড়িতে তখন 10:30 am , না আর দেরি করা ঠিক হবে না এখনো অনেক রাস্তা তার উপর পাহাড়ি রাস্তা এক বার কোথায় জাম লাগলে হয়ে গেল , জাম পেরিয়ে যেতে কত সময় যে লাগবে তার কোনো ঠিক নেই ।
তিস্তা নদীকে বামে রেখে গাড়ি ছুটে চলেছে ।
পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে ইতি মধ্যেই বমি বমি ভাব উপলব্ধি করছি তাই ব্যাগ থেকে একটা বমির ওষুধ মুখে ভরে দিলাম ।
ড্রাইভারদা বলে উঠলো ওই দেখুন কালিম্পম যাওয়ার রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে ।
সেবক পেরিয়ে রাস্তা আলাদা হয়েছে, একটি যাচ্ছে গ্যাংটোক আর একটি কালিম্পম, আমি আগেও এসেছি এ পথে তাই ব্যাপারটা জানতাম কিন্তু নতুন আগন্তুকের মতোই চেয়ে রইলাম সে পথের দিকে ।
ড্রাইভারদার মুখটা খুশিতে ভরে গেল আমায় নতুন কিছু দেখানোর আনন্দ তে । সে আনন্দ কেড়ে নেয়ারও কোনো রকমের ইচ্ছে আমার ছিল না তাই তার কথা মন দিয়ে শুনতে লাগলাম ।
তিস্তার পাড় বরাবর রাফটিং হয় মানে এই তিস্তা নদীর প্রবল জলের ধারার উপর ভেসে থাকার মজা নেওয়া । অনেক কোম্পানি আছে তিস্তার পাড় বরাবর যারা সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যাক্তির মাধম্যে এই রাফটিং করিয়ে থাকে ।
আমার এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ না থাকায় সে পথে পা বাড়ালাম না ।
গাড়ি এগিয়ে চলেছে, ড্রাইভারদার গাইড সত্ত্বা আরো জেগে উঠেছে । সে পথের পাশে নানা জিনিস দেখাতে থাকলো সেই সঙ্গে নানা গল্প যার কিছু সত্যি কিছু আজগুবি আর কিছু আমি কস্মিন কালেও শুনি নি । আর যাই হোক এই লম্বা গাড়ি যাত্রা বেশ জমে উঠলো আড্ডায় ।
ইতিমধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি রংপো তে ।
এই রংপো হলো ওয়েস্টবেঙ্গল ও সিকিম বর্ডার ।
তাই সিকিম পুলিশ গাড়ি চেক করলো , সরকারি পরিচয় পত্র দেখলো । সব কিছু ঠিক দেখে অনুমতি পেলাম সিকিম এ ঢোকার ।
রংপো পর হতেই চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেলো, প্রকৃতি যেন তার দুই হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করার প্রতীক্ষায় আছে ।
আনমনা দৃষ্টিতে সে দৃশ্য উপভোগ করছি , পাহাড়ের কোলে নানা গাছের সারি , সবুজ হলুদ রঙের মিশ্রনে এক অপরূপ শোভার সৃষ্টি করেছে ।
দাদা জানেন তো ।
গাড়ির জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি ফেরালাম ড্রাইভারদার দিকে ।
সে চোখের দৃষ্টি অদ্ভুত করে বললো
এ রাস্তায় রাতে ভুত দেখা যায় অনেক গাড়ির ড্রাইভার এই জায়গায় ভুত দেখেছে ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কি কখনো দেখেছো ?
সে বললো এ পথে আমি রাতে গাড়ি নিয়ে কখনো আসি না ।
বুজলাম এ ব্যাটা মনে মনে ভীতু আছে ।
তবে তার এই ভয়ের কারণ আমূলক নয়, কারণ এই পথে ভুত দেখার এই ঘটনা অনেকের সাথে হয়েছে ,আর তা অনেকের ই জানা ।
রাস্তা খুবই ভালো তাই গাড়ি ও পাহাড়ি রাস্তায় বাঁক খেয়ে বেশ ভালোই ছুটে চলেছে মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাহাড়ি জনপদ , বাজার, পেরিয়ে যাচ্ছে । এইভাবেই ঘন্টা দুয়েকের বেশি রাস্তা কখন যে পেরিয়ে গেলো টের ই পেলাম না ।
হটাৎ অনুভব করলাম কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে ।
মনে পড়লো সমতল থেকে এখন আমরা অনেক উপরে চলে এসেছি তাই গরম বিদায় নিয়েছে ।
হালকা একটা গরম জামা গায়ে চাপিয়ে নিলাম ।
ইতিমধ্যে পাহাড়ে মেঘ বৃষ্টির খেলা শুরু হয়ে গেছে । এখানে বৃষ্টির কোনো নিয়ম নেই ভাসমান মেঘ পাহাড়ের গায়ে যেখানে বাধা পাবে সেখানেই এক পশলা বৃষ্টি হবে, আবার পর মুহুর্তে ই রোদে ভরা আকাশ । তাই গ্যাংটক বা সিকিম ঘুরতে আসলে ছাতা সঙ্গে রাখাটা আবশ্যক ।
ভাসা মেঘের মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে । সেই মেঘের কুয়াশা দানা বেঁধে আছে সবুজ পাহাড়ের গায়ে । প্রকৃতির কি অদ্ভুত উপহার এ দৃশ্য নিজে চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না ।
ড্রাইভারদা পাশ থেকে বলে উঠলো, দাদা সামনে দেখুন ।
গাড়িটা সবে একটা নতুন বাক নিয়েছে আর তাতেই হাজির হয়েছে এই নতুন দৃশ্য ।
মেঘের কুয়াশায় ঢাকা রাস্তা ভেদ করে দূরে ঝাপসা এক দৃশ্য , পাহাড়ের কোলে রংবে রং এর বাড়ির সমাহার । ধাপে ধাপে নেমে এসেছে, পাহাড়ের উপর থেকে নিচে পর্যন্ত , দুই তিনটে পাহাড় জুড়ে এই দৃশ্য ।
ঘড়ির সময় , রাস্তার মাইলস্টোন , আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আর ড্রাইভারদার প্রাণ ভরা গাইড বুজিয়ে দিলো এই হলো সিকিম এর রাজধানী গ্যাংটক ।
ধীরে ধীরে সেই দৃশ্য আরো পরিষ্কার হতে লাগলো । আকাশ ও রোদে ভোরে উঠেছে , মেঘের কুয়াশা কেটে গেছে , রাস্তায় লোকজন ও গাড়ির পরিমান ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো ।
রাস্তার ধারে দোকান পাট , আশ পাশের পরিবেশ দেখে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম ।
আগের বারের থেকে এ বারের গ্যাংটোকের কি পার্থক্য হয়েছে । গাড়ি পৌঁছে গেছে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ।ডান দিকে M.G Marg কে রেখে গাড়ি এগিয়ে গেলো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এর দিকে ।

সিকিমে ট্রাফিক আইন বা নিয়ম খুব ভালো ভাবে পালন করা হয় ।
সিকিমের মানুষরাই এই আইন পালনে নিজেরাই এক এক জন পুলিশ ।
তাই সিকিম ভ্রমণে আসলে নিয়ম মেনে চলবেন না হলে অনেক টাকা জরিমানা বা জেল পর্যন্ত হতে পারে ।
অবশেষে নির্দিষ্ট গাড়ি পার্কিং এর জায়গা বা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নেমে পড়লাম ।
ড্রাইভারদা কে গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগ গুলো গাড়ি থেকে নামাতে লাগলাম ।
ড্রাইভার দা বললো হোটেল কি বুক করা আছে ?
আমি বললাম না
সে বলল না থাকলে লোকাল ট্যাক্সি ধরুন ওরা আপনাকে ভালো হোটেল এ নিয়ে যাবে ।
বুজলাম সেই কমিশন প্রথা ।
আমি বললাম আমার চেনা জায়গা , আমি নিজেই হোটেল দেখে নেবো ।
ড্রাইভারদা একটু অবাক হলো
সে বলল আমি ভাবলাম আপনি নতুন এসেছেন ।
আমি বললাম, সেটা বললে আপনার কাছ থেকে এতো ভালো ভালো গল্প গুলো শুনতে পেতাম না যে ।
সে কিছুটা লজ্জাতে মুচকি হাসল আর আমার সাথে করমর্দন করলো ।
বেলা 2 টো বাজে ব্যাগ নিয়ে পা বাড়ালাম একটা ভালো হোটেল খোঁজার উদ্দেশে ।
ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে চারিদিকটা ভালো করে দেখতে লাগলাম ।
ইচ্ছে আছে MG Marg এর কাছাকাছি একটা হোটেল নেওয়ার ।
পরবর্তী পর্ব - গ্যাংটক শহরে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ।
For many more Travel Blog & Videos
Follow my Blog & visit my Youtube Channel
YOUR TRAVEL FRIEND (SUBSCRIBE )
https://www.youtube.com/c/YOURTRAVELFRIEND